রাশিয়ার ভূমি দাসদের মুক্তির সুফল ও কুফল গুলি আলোচনা করো

রাশিয়ার ভূমি দাসদের মুক্তির সুফল -


১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ১৯ ফেব্রুয়ারি 'মুক্তির ঘোষণাপত্র'-এর দ্বারা রাশিয়ার জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার রাশিয়ার ভূমিদাসদের মুক্তি দিয়েছিলেন। রাশিয়ার ভূমিদাসদের মুক্তির বিভিন্ন সুফল লক্ষ্য করা যায়। সেগুলি হল -

কুপ্রথার অবসান ঃ ভূমিদাসদের মুক্তির মধ্যে দিয়ে রাশিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একটি কুপ্রথার অবসান ঘটে। ভূমিদাসদের মুক্তির ফলে তারা দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসাবে নিজেদের পরিচয় দিতে পারে। 

আধুনিক যুগের সূচনা ঃ রাশিয়ার ভূমিদাস প্রথার অবসানের মধ্যে দিয়ে একদিকে যেমন কুপ্রথার অবসান ঘটে অন্যদিকে তেমনই আধুনিক যুগের সূচনা ঘটে। এরপর থেকেই রাশিয়ায় বিভিন্ন উদারনৈতিক ও প্রগতিশীল সংস্কার চালু হয়।

কৃষিক্ষেত্রে অগ্রগতি ঃ ভূমিদাস প্রথার অবসানের পর সেদেশে কৃষিক্ষেত্রে মজুরের জোগান বৃদ্ধি পায়। ফলে কৃষিক্ষেত্রে অগ্রগতি ঘটে এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

অর্থনৈতিক উন্নতি ঃ কৃষিক্ষেত্রে উন্নতির ফলে রাশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটে। এরফলে জমির মূল্য বৃদ্ধি পায়, সরকারি আয় বৃদ্ধি পায় এবং বাণিজ্যের উন্নতি ঘটে।

শিল্পের উন্নতি ঃ ভূমিদাসরা তাদের প্রভুর কাছ থেকে মুক্তি লাভ করে কলকারখানা, খনি ইত্যাদি জায়গায় শ্রমিক রূপে যোগদান করে। ফলে দেশে শ্রমিক শ্রেণির উন্নতি ঘটলে শিল্পায়ন শুরু হয়।


আরও পড়ুন ঃ


রাশিয়ার ভূমিদাসদের মুক্তির কুফল -


১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার রাশিয়ার ভূমিদাসদের মুক্তি ঘোষণা করেন। এরফলে একদিকে যেমন রাশিয়ার কৃষিক্ষেত্রে উন্নতি, অর্থনৈতিক উন্নতি, শিল্পের উন্নতি ঘটেছিল তেমনই অন্যদিকে এর কিছু কুফলও লক্ষ্য করা যায়। নিন্মে রাশিয়ার ভূমিদাসদের মুক্তির কুফল সম্পর্কে আলোচনা করা হল -

আর্থিক দায় ঃ ভূমিদাসদের মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে তাদের ওপর বিপুল আর্থিক দায় চাপিয়ে দেওয়া হয়। এরফলে সদ্য মুক্ত কৃষকদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। কারণ জমির ন্যায্য মূল্যের চেয়ে অধিক পরিমাণ অর্থ তাদের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছিল।

করের বোঝা ঃ ভূমিদাসদের মুক্তি দেওয়ার পর তাদের উৎপন্ন ফসলের ২/৩ অংশ ভূমিকর হিসাবে চাপিয়ে দেওয়া হয়। ভূমিকর ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের সরকারি করের বোঝা তাদের ওপর চাপানো হয়। ভূমিদাসদের প্রাপ্য জমির কিস্তি দেওয়ার পরও এইসব ধরণের কর মেটানো তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। এরফলে মুক্তি পাওয়া ভূমিদাসদের একটা বড় অংশ জারের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছিল।

জমি বণ্টনে বৈষম্য ঃ জমি বণ্টনের সময় জমিদাররা উর্বর, সেচের সুবিধাযুক্ত জমিগুলি লাভ করে। আর সদ্য মুক্তি পাওয়া কৃষকদের ভাগে পড়ে অনুর্বর বা বালুকাময় জলাভুমি, যেখানে কৃষিকাজ সম্ভব নয়।

মির-এর কর্তৃত্ব ঃ গ্রামীণ সমিতি 'কমিউন' বা 'মির'-গুলি মুক্ত ভূমিদাসদের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। আসলে কৃষকরা নয়, জমির প্রকৃত মালিক ছিল গ্রামীণ মিরগুলি। এরফলে কৃষকরা তাদের জমি বিক্রি, বন্ধক বা দান করা কোনটিই পারত না। মিরের নির্দেশ ছাড়া কৃষকরা অন্যত্র যেতে পারত না। 

জমিদারদের লাভ ঃ ভূমিদাসদের মুক্তির ফলে জমিদাররা ৫০ শতাংশ আবাদি জমি লাভ করে, ভূমিদাসদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থেকে মুক্তি পায়, প্রচুর আর্থিক ক্ষতিপূরণ লাভ করে। এরফলে শেষপর্যন্ত জমিদাররাই লাভবান হয়।

মূল্যায়ন ঃ রাশিয়ার ভুমিদাস প্রথার অবসানের মধ্যে দিয়ে একদিকে যেমন রাশিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা কুপ্রথার অবসান ঘটে তেমনই অন্যদিকে বিভিন্ন ত্রুটির কারণে এটি সদ্য মূক্তি পাওয়া ভূমিদাসদের ওপর নিষ্ঠুর পরিহাস ছাড়া কিছুই নয়। তবে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, ভূমিদাস প্রথার অবলুপ্তি রাশিয়ার ইতিহাসে স্মরণীয় ঘটনা হিসাবে উল্লেখ থাকবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post