১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের প্রভাব -
১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে জুলাই বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে লুই ফিলিপ ফ্রান্সের সম্রাট হন এবং জুলাই রাজতন্ত্রের সূচনা করেন। মাত্র দুই দশকের মধ্যেই এই রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংঘটিত হয়েছিল ফেব্রুয়ারি বিপ্লব। সমকালীন ইউরোপীয় রাজনীতিতে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের যে প্রভাব লক্ষ্য করা যায় তা হল -
ফ্রান্সে প্রভাব ঃ ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ফলে ফ্রান্সে জুলাই রাজতন্ত্রের পতন ঘটে এবং অস্থায়ী প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এই অস্থায়ী প্রজাতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার রাষ্ট্রপতি হন লা-মার্টিন। নবগঠিত প্রজাতান্ত্রিক সরকার বিভিন্ন জনহিতকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
জার্মানিতে প্রভাব ঃ ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ফলে জার্মানির প্রাশিয়া, স্যাক্সনি, ব্যাডেন, ব্যাভেরিয়া, হ্যানোভার ইত্যাদি অঞ্চলে ব্যাপক গণ-আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনের চাপে এই সব অঞ্চলের সরকার সেখানে উদারনৈতিক সংস্কার করতে বাধ্য হয়।
ইতালিতে প্রভাব ঃ ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের প্রভাবে ইতালির পার্মা, নেপলস, সিসিলি, টাস্কোনি এমনকি পোপের রাজ্যতেও বিদ্রোহ শুরু হয়। এই বিদ্রোহের ফলে কয়েকটি রাজ্যে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
অস্ট্রিয়ায় প্রভাব ঃ অস্ট্রিয়ার মেটারনিখের সাম্রাজ্যে বিদ্রোহের ভয়ঙ্কর রূপ দেখা যায়। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাতে মেটারনিকের বাসভবন বিদ্রোহী জনতারা আক্রমণ করে। ফলে মেটারনিখ ইংল্যান্ডে পালিয়ে যান এবং অস্ট্রিয়ায় মেটারনিকের পতন ঘটে। এইভাবে অস্ট্রিয়ায় একটি উদারনৈতিক সংবিধান চালু হয়।
ডেনমার্কে প্রভাব ঃ ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ফলে ডেনমার্কের রাজা সপ্তম ফ্রেডারিখ সংবিধান সভার অধিবেশন ডাকতে বাধ্য হন।
মূল্যায়ন ঃ ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ফলে নবগঠিত প্রজাতান্ত্রিক সরকার সর্বজনীন ভোটাধিকার, শিক্ষাবিস্তার, শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষা, বেকারত্ব দূর করা ইত্যাদি বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এই কারণে কার্ল মার্কস ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবকে 'সুন্দর বিপ্লব' বলে আখ্যায়িত করেছেন।
আরও পড়ুন ঃ