তুরস্ককে ইউরোপের রুগ্ন মানুষ বলা হয় কেন

তুরস্ককে ইউরোপের রুগ্ন মানুষ বলার কারণ -


এশিয়া মহাদেশের তুর্কি সাম্রাজ্য পঞ্চদশ, ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকে এশিয়ার বাইরে ইউরোপ ও আফ্রিকাতেও প্রসারিত হয়েছিল। এই সুবিশাল সাম্রাজ্য শাসনের পিছনে ছিল তুর্কিদের সামরিক শক্তি। তবে অষ্টাদশ শতক থেকে বিভিন্ন কারণে তুর্কি সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়েছিল। যেকারনে তুরস্ককে ইউরোপের রুগ্ন মানুষ বলা হয়। নিন্মে তুরস্ককে ইউরোপের রুগ্ন মানুষ বলার কারণ।

সংস্কারের অভাব ঃ অষ্টাদশ শতকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বহু আধুনিক সংস্কার ঘটেছিল। কিন্তু তুর্কির সুলতানরা যুগোপযোগী আধুনিক সংস্কার প্রবর্তনে ব্যর্থ হন। তাদের প্রাচীন মানসিকতার ফলে তুরস্ক মধ্যযুগীয় মোল্লাদের অধীনেই পড়ে ছিল। এর ফলে আধুনিক সভ্যতার থেকে তুরস্ক ক্রমশ পিছিয়ে পড়তে থাকে। 

শাসকদের অযোগ্যতা ঃ তুর্কি সুলতানরা স্বেচ্ছাচারী, স্বৈরাচারী, অকর্মণ্য, ব্যভিচারী ছিলেন। দেশের গণতান্ত্রিক আদর্শ ও প্রজাকল্যাণে তাদের কোনরূপ আগ্রহই ছিল না। ফলে মাঝে মাঝেই তাদের বিরুদ্ধে দেশের সাধারণ জনগণ বিদ্রোহ করত।

সামরিক দুর্বলতা ঃ তুর্কি সুলতানরা অন্যান্য দিকের সংস্কার যেমন করেননি তেমনই সামরিক দিকের সংস্কারের ব্যাপারেও তাদের কোন আগ্রহ ছিল না। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যুগের সাথে সাথে তাদের সামরিক শক্তির অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটালেও তুরস্ক তাতে ব্যর্থ হয়। ফলে ধীরে ধীরে তুরস্ক ইউরোপের শক্তিগুলির কাছে তুচ্ছ হয়ে পড়ে।

চূড়ান্ত দুর্বলতা ঃ অষ্টাদশ শতক নাগাদ তুরস্ক সামরিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি সব দিক থেকেই দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তাছাড়া এই সময় থেকে অভ্যন্তরীণ ও বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করতেও তুরস্ক ব্যর্থ হতে থাকে। এইসব দুর্বলতার জন্যই ব্যঙ্গ করে তুরস্ককে 'ইউরোপের রুগ্ন মানুষ' বলা হত।

মূল্যায়ন ঃ তুরস্কের দুর্বলতার সুযোগে বলকান অঞ্চলে রাশিয়ার প্রবেশ ঘটেছিল এবং রাশিয়ার এই অগ্রগতি রোধ করার জন্য অস্ট্রিয়া, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স তৎপর হয়ে উঠলে বলকান অঞ্চলে যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post