গ্রিসের স্বাধীনতা যুদ্ধের অগ্রগতির বিবরণ দাও

গ্রিসের স্বাধীনতা যুদ্ধ -

১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে তুরস্কের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম সার্বিয়ার জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু হয়েছিল। আন্দোলনের চাপে ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে তুরস্ক সার্বিয়াকে আংশিক স্বায়ত্তশাসন প্রদান করেছিল। ঊনবিংশ শতকের প্রথম দিক থেকেই তুরস্কের বিরুদ্ধে গ্রিসের স্বাধীনতা যুদ্ধ শক্তিশালী হতে শুরু করে। নিন্মে গ্রিসের স্বাধীনতা যুদ্ধের অগ্রগতির বিবরণ দেওয়া হল -

হেটাইরিয়া ফিলিকে ঃ ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে স্কুফাস নামে এক গ্রিক ব্যবসায়ী 'হেটাইরিয়া ফিলিকে' বা 'স্বাধীনতার অনুরাগী' নামে একটি গুপ্ত সমিতি গঠন করেছিলেন। যার উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপ থেকে তুর্কি শাসনের অবসান ঘটানো এবং গ্রিসের মুক্তি।

হপসিল্যান্টির বিদ্রোহ ঃ ১৮২১ খ্রিস্টাব্দে হেটাইরিয়া ফিলিকের সভাপতি এবং গ্রিসের মলডেভিয়া প্রদেশের শাসক আলেকজান্ডার হপসিল্যান্টি গ্রিসের স্বাধীনতার দাবিতে বিদ্রোহ শুরু করে।

মোরিয়ার বিদ্রোহ ঃ হপসিল্যান্টির বিদ্রোহের কিছুকাল পরেই গ্রিসের মোরিয়া প্রদেশে তুরস্কের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হয়। তুর্কির সুলতান মিশরের সামন্ত শাসক মহম্মদ আলির সহায়তায় হাজার হাজার গ্রিককে নির্মম ভাবে হত্যা করে এই বিদ্রোহ দমন করেছিল।

স্বায়ত্তশাসনের দাবি ঃ তুর্কির সুলতানদের দ্বারা গ্রিকদের হত্যার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়া ১৮২৭ খ্রিস্টাব্দে গ্রিসের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লন্ডন চুক্তির মাধ্যমে। কিন্তু তুরস্ক এই দাবি অস্বীকার করে। এরপর ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়া তুরস্ক আক্রমণ করে এবং ১৮২৭ খ্রিস্টাব্দে ন্যাভারিনোর যুদ্ধে তুর্কি বাহিনী ধ্বংস করে। 

অ্যাড্রিয়ানোপলের সন্ধি ঃ ন্যাভারিনোর যুদ্ধের কিছুকাল পর রাশিয়া ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে এককভাবে তুরস্ককে হারিয়ে অ্যাড্রিয়ানোপলের সন্ধি স্বাক্ষরে বাধ্য করে। এই সন্ধির মাধ্যমে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রনে গ্রিস স্বায়ত্তশাসন লাভ করেছিল।

গ্রিসের স্বাধীনতা লাভ ঃ অ্যাড্রিয়ানোপলের সন্ধির মাধ্যমে রাশিয়ার শক্তি বৃদ্ধি ঘটে। এরফলে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং রাশিয়াকে এই সন্ধি পরিবর্তনের জন্য চাপ দিতে থাকে। অবশেষে ১৮৩২  খ্রিস্টাব্দে লন্ডন চুক্তির মাধ্যমে তুরস্ক গ্রিসের স্বাধীনতা মেনে নেয়। স্বাধীনতার পর গ্রিসের প্রথম রাজ্য হয়েছিলেন ব্যাভেরিয়া রাজবংশের প্রথম অটো।

মূল্যায়ন ঃ ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে গ্রিসের স্বাধীনতার মাধ্যমে তুরস্কের দুর্বলতা আরও প্রকট হয়ে ওঠে। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর গ্রিস দ্রুত উন্নতি করতে থাকে এবং তুরস্ক ধীরে ধীরে 'ইউরোপের রুগ্ন মানুষ'-এ পরিণত হয়।


আরও পড়ুন ঃ

Post a Comment

Previous Post Next Post