গ্রিসের স্বাধীনতা যুদ্ধের গুরুত্ব আলোচনা করো

গ্রিসের স্বাধীনতা যুদ্ধের গুরুত্ব -


ঊনবিংশ শতকের প্রথম থেকেই তুরস্কের হাত থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য গ্রিসে আন্দোলন হতে থাকে। অবশেষে ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে লন্ডন চুক্তির মধ্যে দিয়ে তুরস্ক গ্রিসের স্বাধীনতা মেনে নেয়। গ্রিসের স্বাধীনতা যুদ্ধের গুরুত্ব নিন্মে আলোচনা করা হল -

ভিয়েনা সম্মেলনের বিরোধিতা ঃ ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত ভিয়েনা সম্মেলনে ন্যায্য অধিকার নীতির মাধ্যমে ইউরোপে পুরাতনতন্ত্র টিকিয়ে রাখার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু গ্রিসের স্বাধীনতা সংগ্রাম ভিয়েনা সম্মেলনের সেই উদ্যোগকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। 

বলকান জাতীয়তাবাদের প্রসার ঃ গ্রিসের স্বাধীনতা লাভের ফলে গ্রিসের প্রতিবেশী বলকান অঞ্চলের মানুষদের মনে জাতীয়তাবাদী চিন্তাভাবনার উদ্ভব ঘটে। ফলে সমগ্র বলকান অঞ্চল জুড়ে তুরস্কের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। 

মেটারনিক ব্যবস্থার বিরোধিতা ঃ মেটারনিক গোটা ইউরোপে জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ইত্যাদি আধুনিক ভাবধারা প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু গ্রিসের মুক্তি সংগ্রামের ফলে মেটারনিকের সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

তুরস্কের দুর্বলতা ঃ গ্রিসের স্বাধীনতা যুদ্ধে তুরস্কের পরাজয়ের মধ্যে দিয়ে তুরস্কের সামরিক দুর্বলতার প্রকাশ পায়। কারণ তুরস্কের মধ্যে হওয়া অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ এবং বহিঃশত্রুর আক্রমণ ঠেকাতে তুরস্ক ব্যর্থ হয়েছিল।

রাশিয়ার প্রাধান্য ঃ গ্রিসের স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদান করে রাশিয়া একপ্রকার ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে নিজের আধিপত্যের বিস্তার ঘটায়। গ্রিসের স্বাধীনতা যুদ্ধে রাশিয়ার অংশগ্রহণ এবং গ্রিসের জয়লাভের ফলে একপ্রকার রাশিয়ার প্রাধান্য এবং মর্যাদার বৃদ্ধি ঘটেছিল।

মূল্যায়ন ঃ ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দের ভিয়েনা সম্মেলনের মাধ্যমে মেটারনিক গ্রিসের মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী লড়াইয়ের মাধ্যমে গ্রিস তার মর্যাদা ফিরে পায়। সবশেষে বলা যায়, গ্রিসের স্বাধীনতা যুদ্ধ ইউরোপের অন্যান্য জাতিগুলিকে জাতীয়তাবাদী সংগ্রামে অনুপ্রানিত করেছিল।

Post a Comment

Previous Post Next Post