ক্রিমিয়ার যুদ্ধের ফলাফল ও গুরুত্ব -
বলকান অঞ্চলে রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিরোধে ইঙ্গ-ফরাসি শক্তির সক্রিয়তার ফলে ১৮৫৪-১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের সময়কালে ক্রিমিয়ার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয় ঘটে। রবার্ট মোরিয়ার-এর মতে ক্রিমিয়ার যুদ্ধ ছিল আধুনিককালের সবচেয়ে অনাবশ্যক ও অযৌক্তিক যুদ্ধ। কিন্তু ক্রিমিয়ার যুদ্ধের গুরুত্বকে ইউরোপের ইতিহাসে কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না। নিন্মে ক্রিমিয়ার যুদ্ধের ফলাফল ও গুরুত্ব আলোচনা করা হল -
রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিরোধ ঃ ক্রিমিয়ার যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয় ঘটে। এর মধ্যে দিয়ে -
(i) রাশিয়া তুরস্কের কাছ থেকে দখল করা স্থানগুলি ফিরিয়ে দেয়।
(ii) বলকান ও কৃষ্ণসাগরীয় অঞ্চলে রুশ আগ্রাসন ব্যাহত হয়।
জারতন্ত্রের দুর্বলতা ঃ ক্রিমিয়ার যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয়ের ফলে রাশিয়ায় শাসন করা জারতন্ত্রের দুর্বলতার প্রকাশ ঘটে। এরফলে রাশিয়ায় জারতন্ত্রের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়।
রাশিয়ার সংস্কার ঃ ক্রিমিয়ার যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয়ের ফলে সেদেশে জারতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। জনতার মধ্যে থেকে জারতন্ত্রের বিরুদ্ধে থাকা ক্ষোভ দূর করার জন্য রাশিয়ার জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার বিভিন্ন উদারনৈতিক সংস্কার প্রবর্তন করেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল রাশিয়ার ভুমিদাস প্রথার অবসান ঘটানো।
তুরস্কের অগ্রগতি ঃ ক্রিমিয়ার যুদ্ধের পর -
(i) তুরস্ককে ইউরোপীয় রাষ্ট্রমণ্ডলের ও আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় আনা হয়।
(ii) বৃহৎ শক্তিগুলি তুরস্কের অখণ্ডতা ও স্বাধীনতা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয়।।
(iii) তুরস্ক আধুনিক বৈপ্লবিক ভাবধারাগুলি প্রবর্তনে রাজি হয়।
ফ্রান্সের মর্যাদা বৃদ্ধি ঃ ক্রিমিয়ার যুদ্ধে রাশিয়াকে পরাজিত করার পিছনে ফ্রান্সের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। সেজন্য এই যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে একদিকে যেমন রাশিয়ার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় অন্যদিকে তেমনই ফ্রান্সের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
ইতালি ও জার্মানির ঐক্য ঃ ক্রিমিয়ার যুদ্ধের ফলে -
(i) ইতালির পিডমন্ট-সার্ডিনিয়া ক্রিমিয়ার যুদ্ধে যোগ দেওয়ায় তারা ইতালির ঐক্যে সহায়তা করে।
(ii) অস্ট্রিয়া ও প্রাশিয়ার যুদ্ধের সময় অস্ট্রিয়ার মিত্র দেশ রাশিয়া তার পাশে দাঁড়ায়নি। ফলে অস্ট্রিয়াকে পরাজিত করে প্রাশিয়া সহজেই জার্মানির ঐক্যের পথ প্রস্তুত করেছিল।
বলকান জাতীয়তাবাদ ঃ ক্রিমিয়ার যুদ্ধের পর বলকান অঞ্চলের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটে। এরফলে এইসব জাতিগোষ্ঠী স্বাধীনতার দাবি জানায়।
মূল্যায়ন ঃ ক্রিমিয়ার যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয়ের ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাশিয়ার মান-মর্যাদা হ্রাস পায় এবং ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। তবে এই যুদ্ধের ফলাফল ও গুরুত্ব খুব বেশি বড়ো না হলেও একেবারে গুরুত্বহীন নয়।