সর্ব জার্মানবাদ -
১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাতে অনুষ্ঠিত ভিয়েনা সম্মেলনে অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রিন্স মেটারনিক জার্মানির ওপর তীব্র দমননীতি চালিয়ে জার্মানির ঐক্য প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। এরপর ঊনবিংশ শতকের প্রথম দিকে জার্মানিতে ছাত্র, শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিকদের প্রচেষ্টায় একটি উদারনৈতিক ভাবধারা ছড়িয়ে পড়ে, যা সর্ব জার্মানবাদ বা প্যান জার্মানিজম নামে পরিচিত। নিন্মে সর্ব জার্মানবাদ সম্পর্কে আলোচনা করা হল -
জাতীয়তাবাদের প্রসার ঃ ঊনবিংশ শতকের প্রথমদিকে জার্মানির বিভিন্ন কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ছাত্র প্রমুখ একটি অখণ্ড জার্মানির উদ্দেশ্যে জাতীয়তাবাদী ভাবধারা প্রচার করে। এই বিষয়ে অসামান্য অবদান রাখেন ফিখটে, হেগেল, কান্ট, সাইবেন, হাইন প্রমুখ।
জেনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ঃ জার্মানিতে অখণ্ড জাতীয়তাবাদী ভাবধারা প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল জেনা বিশ্ববিদ্যালয়। এর অনুকরণে জার্মানির অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যেমন বার্লিন, মিউনিখ, লাইপজিগ ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী ভাবধারা প্রচারে এগিয়ে আসে।
গুপ্ত সমিতি ঃ জার্মানিতে অখণ্ড জাতীয়তাবাদী ভাবধারা প্রচারের উদ্দেশ্যে জার্মানির জেনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা 'বুরসেনসাফটেন' নামক একটি গুপ্ত সমিতি গড়ে তোলে। এর কিছুদিনের মধ্যেই সমগ্র জার্মানি জুড়ে আরও বহু গুপ্ত সমিতি গড়ে ওঠে।
দমননীতি ঃ মেটারনিখ ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে কার্লসবাড ডিক্রি জারি করে জার্মানির -
(i) রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন, সভাসমিতি ইত্যাদি নিষিদ্ধ করেন।
(ii) জাতীয়তাবাদী ছাত্র এবং শিক্ষকদের বিদ্যালয়, কলেজ থেকে বিতাড়িত করা হয়।
(iii) সংবাদপত্র ও মানুষের বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়।
এগুলির মাধ্যমে মেটারনিক জার্মানিতে 'সর্ব জার্মানবাদ' ভাবধারা ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন।
মূল্যায়ন ঃ সর্ব জার্মানবাদ ভাবধারা জার্মানির জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদের আবেগ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল যা পরবর্তীকালে জার্মানির ঐক্যের পথে বিশেষ সহায়ক হয়েছিল।
আরও পড়ুন ঃ