জোলভেরাইন -
ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়নের পতনের পর ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে ভিয়েনা সম্মেলনের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাবে জার্মানির ঐক্য প্রতিহত করার চেষ্টা করা হয় এবং ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দের পর থেকেই জার্মানিতে ঐক্য আন্দোলন শুরু হয়। এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল 'জোলভেরাইন' নামক শুল্ক সংঘ। নিন্মে জোলভেরাইন সম্পর্কে আলোচনা করা হল -
পূর্ব পরিস্থিতি ঃ ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের আগে পর্যন্ত জার্মানি খণ্ড খণ্ড রাজ্যে বিভক্ত ছিল। এই সময় জার্মানির বিভিন্ন রাজ্যে পৃথক পৃথক আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক প্রচলিত ছিল। এর ফলে বাণিজ্য ও পণ চলাচলে খুব অসুবিধা ছিল।
জোলভেরাইন-এর প্রতিষ্ঠা ঃ জার্মানিতে শুল্ক সমস্যা দূর করার জন্য জার্মান অর্থনীতিবিদ ম্যাজেন-এর উদ্যোগে ও প্রাশিয়ার নেতৃত্বে ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে 'জোলভেরাইন' নামক একটি শুল্ক সংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে অস্ট্রিয়া ছাড়া বাকি সব জার্মান রাজ্য এই শুল্ক সংঘে যোগদান করে।
কার্যক্রম ঃ প্রতিবছর এক বার এই শুল্ক সংঘের বৈঠক হত। এই সংঘের সদস্য রাজ্যগুলি কম শুল্কে অথবা বিনা শুল্কে নিজেদের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন করত। ফলে এই সব রাজ্য গুলি বাণিজ্যে খুব লাভবান হত।
গুরুত্ব ঃ জোলভেরাইন শুল্ক সংঘ বিভিন্ন অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে গঠিত হলেও এর বিভিন্ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও ছিল। যেমন -
(i) এই সংঘের মাধ্যমে জার্মানির বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে অর্থনৈতিক ঐক্য গড়ে ওঠে।
(ii) অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সুযোগ্য নেতৃত্বের পরিচয় দিতে প্রাশিয়া জার্মানির রাজনৈতিক ঐক্য আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পায়।
(iii) এর ফলে জার্মানির দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটতে থাকে।
(iv) সদস্য রাজ্যগুলির মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ও ভাবের আদানপ্রদানের ফলে জার্মানির ভাবগত ঐক্য সুদৃঢ় হয়।
মূল্যায়ন ঃ সবশেষে বলা যায় যে, অখণ্ড জার্মানির অর্থনৈতিক ঐক্যের মাধ্যমে জার্মানদের রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জোলভেরাইন শুল্ক সংঘ বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল।
আরও পড়ুন ঃ