জার্মানির ঐক্য প্রতিষ্ঠায় বিসমার্কের রক্ত ও লৌহ নীতি সম্পর্কে আলোচনা করো

জার্মানির ঐক্য প্রতিষ্ঠায় বিসমার্কের রক্ত ও লৌহ নীতি -


চতুর্থ ফ্রেডারিখ উইলিয়ামের পরবর্তী রাজা প্রথম উইলিয়াম প্রাশিয়ার নেতৃত্বে জার্মানির ঐক্য প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হয়ে ওঠেন। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে অটো ফন বিসমার্ক প্রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত হন। এরফলে তিনি প্রথম উইলিয়ামের লক্ষ্য বাস্তবায়িত করার সুযোগ পায়। জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য বিসমার্ক বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করেছিলেন। যার মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ছিল 'রক্ত ও লৌহ নীতি'। নিন্মে জার্মানির ঐক্য প্রতিষ্ঠায় বিসমার্কের রক্ত ও লৌহ নীতি আলোচনা করা হল -

রাজতন্ত্রে বিশ্বাস ঃ বিসমার্ক ছিলেন রাজতন্ত্রে বিশ্বাসী। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল প্রাশিয়ার রাজতন্ত্রের অধীনে সমগ্র জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং প্রাশিয়ার রাজতান্ত্রিক ভাবধারায় জার্মানিকে প্রভাবিত করে জার্মানিকে প্রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা।

রক্ত ও লৌহ নীতি ঃ বিসমার্ক কখনোই গণতান্ত্রিক রীতির ওপর আস্থাশীল ছিলেন না। তিনি সর্বদা 'রক্ত ও লৌহ' নীতির ওপর আস্থা রেখেছিলেন। প্রাশিয়ার আইনসভায় বিসমার্ক ঘোষণা করেছিলেন যে, বিতর্ক বা ভোটের দ্বারা নয়, জার্মানির সমস্যা সমাধান হবে একমাত্র রক্ত ও লৌহ নীতির দ্বারা।

সামরিক শক্তিতে আস্থা ঃ বিসমার্ক উপলব্ধি করেছিলেন যে, জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করতে গেলে একমাত্র সামরিক শক্তির জেরেই তা সম্ভব। এজন্য তিনি প্রাশিয়ার প্রতিনিধি সভার মত অগ্রাহ্য করেন এবং প্রাশিয়ার সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে নজর দেন। এই উদ্দেশ্যে বিসমার্ক তিনটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধের মাধ্যমে জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। এই তিনটি যুদ্ধ হল - (i) ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের সঙ্গে যুদ্ধ, (ii) ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ এবং (iii) ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধ।

মূল্যায়ন ঃ বিসমার্ক ছিলেন কূটনীতির জাদুকর। তিনি কূটকৌশল এবং 'রক্ত ও লৌহ নীতি'-র মাধ্যমে জার্মানির ঐক্য প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এককথায় বলতে গেলে বিসমার্কের কাছে ন্যায়নীতির চেয়ে বাস্তব কূটনীতিই ছিল মুখ্য বিষয়। আর এজন্যই তিনি জার্মানির ঐক্য প্রতিষ্ঠায় সফল হয়েছিলেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post