রাশিয়ার ভূমিদাস প্রথা অবসানের কারণ -
১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ১৯ ফেব্রুয়ারি একটি ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে রাশিয়ার জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার রাশিয়ার ভূমিদাসদের মুক্তি দেন। এইভাবে রাশিয়ায় ভূমিদাস প্রথার অবসান ঘটে। নিন্মে রাশিয়ার ভূমিদাস প্রথার অবসানের কারণগুলি আলোচনা করা হল -
শিল্প-বাণিজ্যে অদক্ষতা ঃ উনিশ শতকের প্রথম থেকেই রাশিয়ার অর্থনীতিতে ভূমিদাস প্রথার অপ্রয়োজনীয়তা অনুভব হয়। কারণ -
(i) এই সময় রাশিয়ায় শিল্পায়ন শুরু হয় এবং শিল্পের কাজে অদক্ষ ভূমিদাস নয় বরং দরকার ছিল দক্ষ ও স্বাধীন শ্রমিকের।
(ii) দেশে বাণিজ্যের প্রসার ঘটলেও ভূমিদাসরা দেশের বাণিজ্যের প্রসারের কাজে কোনরূপ সহায়তা করতে পারেনি।
কৃষিক্ষেত্রে ব্যর্থতা ঃ উনিশ শতকে রাশিয়ার কৃষিক্ষেত্রে নতুন বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হলে অদক্ষ ভূমিদাসরা তা ব্যবহারে ব্যর্থ হয়। এরফলে কৃষিক্ষেত্রে তাদের প্রয়োজনীয়তা হারায়। উদ্যমহীন ভূমিদাসদেড় চেয়ে স্বাধীন মজুর নিয়োগ করে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়।
যুদ্ধে পরাজয় ঃ রাশিয়ার সেনাদলে বেশিরভাগই ছিল ভূমিদাস। ফলে ভূমিদাসদের নিয়ে গড়ে ওঠা রাশিয়ার সেনাবাহিনী ১৮৫৪ থেকে ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সংঘটিত ক্রিমিয়ার যুদ্ধে পরাজিত হয়। এরফলে ভূমিদাস প্রথার ব্যর্থতা ও অপ্রয়োজনীয়তা সকলের সামনে ফুটে ওঠে।
কৃষক বিদ্রোহ ঃ অত্যাচারিত ও নিপীড়িত ভূমিদাসরা বার বার বিদ্রোহ করে রাশিয়ার জারকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। রাশিয়ার জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের ৬ বছরের শাসনকালে অন্তত ৪০০ টির বেশি কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল।
বুদ্ধিজীবীদের প্রতিবাদ ঃ রাশিয়ার সাহিত্যিক, কবি, সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকরা ভূমিদাস প্রথার তীব্র বিরোধিতা শুরু করলে তা দেশের সরকারকে মুশকিলে ফেলে দিয়েছিল।
মূল্যায়ন ঃ রাশিয়ার জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ভূমিদাস প্রথার অবসান ঘটিয়েছিলেন, এরফলে একটি অমানবিক প্রথা বন্ধ হয়। তবে সমস্ত ক্রীতদাস মুক্তির স্বাদ পায়নি। ফলে জারের বিরুদ্ধে বহুবার কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল।
আরও পড়ুন ঃ