জার্মানির ঐক্যের পথে প্রধান বাঁধা বা প্রতিবন্ধকতা -
প্রাচীন পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের লীলাভূমি ছিল জার্মানি। এটি ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ফরাসি বিপ্লবের আগে পর্যন্ত অন্তত ৩০০ টি ছোট ছোট রাজ্যে বিভক্ত ছিল। বিভিন্ন প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এই রাজ্যগুলিকে ঊনবংশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ করা যায়নি। কারণ জার্মানির ঐক্যের পথে বিভিন্ন বাঁধা ছিল। যেমন -
বিরোধ ঃ খণ্ড বিখন্ড জার্মানির ছোট ছোট রাজ্যগুলির মধ্যে সন্দেহ, বিদ্বেষ ও মতবিরোধ ছিল তীব্র। সম্পদশালীরা সবসময় সম্পত্তির ভিত্তিতে ভোটাধিকার চাইত। কিন্তু চরমপন্থিরা সর্বসাধারণের ভোটাধিকার, প্রজাতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের পক্ষে সম্পদশালীদের বিরোধ করে চলত।
ধর্মীয় বিভেদ ঃ এই সময় জার্মানিতে ধর্মীয় বিভেদ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল। জার্মানির উত্তরাংশের রাজ্যগুলিতে প্রোটেস্ট্যান্টদের প্রাধান্য ছিল এবং দক্ষিণাংশে ছিল ক্যাথলিক ধর্মের প্রাধান্য। এই কারণে এই দুই অঞ্চলের মধ্যে ভাবগত ঐক্য গড়ে ওঠেনি।
অস্ট্রিয়ার ভূমিকা ঃ ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দের ভিয়েনা সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জার্মান রাষ্ট্র-সমবায়ের সভাপতি হয়েছিল অস্ট্রিয়া। এরফলে জার্মানিতে অস্ট্রিয়ার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা হয়। অস্ট্রিয়া জার্মানির ঐক্যের জন্য মোটেই আগ্রহী ছিল না।
দমননীতি ঃ রাশিয়া, অস্ট্রিয়া ও প্রাশিয়া বিভিন্ন দমনমূলক আইন প্রণয়ন করে জার্মানির উদারনৈতিক ভাবধারা ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল।
অস্ট্রিয়া ও প্রাশিয়ার সমস্যা ঃ অনেকে অস্ট্রিয়া ও প্রাশিয়ার নেতৃত্বের মাধ্যমে জার্মানির ঐক্যের স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু অস্ট্রিয়া ও প্রাশিয়াতে জার্মান জাতির লোক ছাড়াও আরও বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর মানুষেরা বসবাস করত যারা জার্মান জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হতে চাইত না।
মূল্যায়ন ঃ জার্মানির ঐক্যের পথে বিভিন্ন বাঁধা ছিল। কিন্তু সব বাঁধা কাটিয়ে অবশেষে ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির ঐক্য সম্পূর্ণ হয়েছিল।